কাবা ঘরের কোন কোন স্থানে দোয়া কবুল হয় জেনে নিন-Places of acceptance of prayers in the Holy Kaaba
কাবা ঘরের কোন কোন স্থানে দোয়া কবুল হয় জেনে নিন-Places of acceptance of prayers in the Holy Kaaba
কাবা ঘরের কোন কোন স্থানে দোয়া কবুল হয় জেনে নিন-Places of acceptance of prayers in the Holy Kaaba #কাবাঘর #দোয়া
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন: ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। দোয়া ইবাদতের প্রাণ সঞ্জীবনী শক্তি। হজের সফর দোয়া কবুলের অপূর্ব সুযোগ। হজ বা ওমরাহর জন্য ইহরামের নিয়ত করা থেকে দোয়া কবুল হওয়া শুরু হয়। হজের সফরে এমন কিছু সময় ও স্থান রয়েছে, যে সময় ও স্থানে দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল, যে স্থানগুলোতে নবী-রাসুলদের দোয়া কবুল হয়েছিল বলে বর্ণিত আছে। সেসব জায়গায় দোয়া করা বাঞ্ছনীয়। মক্কা শরিফের সব স্থানে দোয়া কবুল হয়। দোয়া কবুলের প্রসিদ্ধ কিছু স্থান উল্লেখ করা হলো।
১) মসজিদুল হারাম: কাবা শরিফের চারদিকের বৃত্তাকার যে নান্দনিক মসজিদ গড়ে ওঠেছে তাই মসজিদুল হারাম। এ মসজিদুল হারামে দোয়া করলে তা কবুল হয়।
২) কাবা শরিফ: মসজিদুল হারামের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত কালো রঙের চতুষ্কোণ আয়তাকার গৃহটিই হলো কাবা শরিফ। কাবা হলো আল্লাহর ঘর। ইবাদত ও দোয়া কবুলের জন্য এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ আর কোনো স্থান হতেই পারে না। বর্ণিত আছে কাবাঘরের ওপর যখন প্রথম নজর পড়ে, তখন যে দোয়া করা হবে তা কবুল হবে।
৩) হাতিম: কাবা ঘরসংলগ্ন উত্তর দিকে অর্ধবৃত্তাকার দেয়ালঘেরা স্থান ‘হাতিম’ ও ‘হুজ্জাতু ইসমাইল’। এই স্থানটুকু আগে কাবাঘরের অন্তর্ভুক্ত ছিল। নবী করিম (সা.)-এর নবুয়তপ্রাপ্তির কিছুদিন আগে কাবাঘরের সংস্কার করা হয়। এ সময় হালাল অর্থের অভাবে পূর্ণ কাবা নির্মাণ সম্ভব হয়নি বিধায় হাতিম অংশ বাদ রেখে নির্মাণ করা হয়েছে। তাই এখানে নামাজ পড়া মানে কাবার ভেতরে নামাজ পড়া। এটা দোয়া কবুলের সর্বোত্তম স্থান।
৪) মিজাবে রহমত: কাবাঘরের ছাদের পানি পড়ার জন্য উত্তর পাশে হাতিমের ভেতরে মাঝখান বরাবর একটি সোনার পরনালা রয়েছে। একে মিজাবে রহমত বলে। এটি দোয়া কবুলের স্থান।
৫) কাবা শরিফের রোকনসমূহ: কাবাঘরের প্রতিটি কোণকে রোকন বলা হয়। দক্ষিণ-পূর্ব কোণে হাজরে আসওয়াদ অবস্থিত। কাবাঘরের উত্তর-পূর্ব কোণকে বলা হয় রোকনে ইরাকি, উত্তর-পশ্চিম কোণকে বলা হয় রোকনে শামি এবং দক্ষিণ-পশ্চিম কোণকে বলা হয় রোকনে ইয়ামানি। এর প্রতিটি কোণ দোয়া কবুলের স্থান।
৬) হাজরে আসওয়াদ: কাবা ঘরের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে দেয়ালে লাগানো জান্নাতি পাথর হলো হাজরে আসওয়াদ। এখান থেকে তাওয়াফ শুরু করতে হয় এবং এখানেই শেষ করতে হয়। হাজরে আসওয়াদ চুম্বনে গুনাহ মাফ হয়। ইশারায়ও চুম্বন করা যায়। এটি দোয়া কবুলের স্থান।
৭) মুলতাজিম: হাজরে আসওয়াদ ও কাবা ঘরের দরজার মধ্যবর্তী স্থানকে বলা হয় মুলতাজেম। এ স্থানের সঙ্গে বুক লাগিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করা। এটিও দোয়া কবুলের বিশেষ স্থান।
৮) বাবুল কাবা: কাবা ঘরের দরজা। দরজায় দাঁড়িয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করা। এখানে দাঁড়িয়ে দোয়া করলেও মহান আল্লাহ বান্দার দোয়া কবুল করেন।
৯) মুসাল্লায়ে জিবরাঈল: কাবার দরজার ডান পাশের স্থানকে মুসাল্লায়ে জিবরাইল বলা হয়। এই স্থানে জিবরাইল আঃ এর ইমামতির মাধ্যমে রাসুল সাঃ ১০ রাকাত নামাজ আদায় করেছিলেন তাই এই স্থানে দোয়া করলেও দোয়া কবুল হয়।
১০) মুস্তাজার: কাবার বহির্গমন দরজা। বর্তমানে দেয়াল দিয়ে বন্ধ করা আছে। মুসতাজার-মুলতাজামের বিপরিত দিকে রুকনে ইয়ামানির বাম পাশের এই স্থানে দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়।
১১) রোকনে ইয়ামানি ও হাজরে আসওয়াদের মধ্যস্থল: কাবার পশ্চিম-দক্ষিণ কোণ হলো রোকনে ইয়ামানি এবং পূর্ব-দক্ষিণ কোণ হলো রোকনে হাজরে আসওয়াদ। তাওয়াফের প্রতি চক্করে এই স্থানে পড়তে হয়: ‘রাব্বানা আতিনা ফিদ দুনিয়া হাছানা, ওয়া ফিল আখিরাতি হাছানা; ওয়া কি না আযাবান নার।’ হে আল্লাহ, আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দিন, আখেরাতে কল্যাণ দিন এবং দোজখের আগুন থেকে রক্ষা করুন।
১২) মাতাফ: মাতাফ, অর্থাৎ তাওয়াফ করার স্থান। কাবা ঘরের চারদিকে মারবেল পাথরে মোড়ানো ধবধবে সাদা উন্মুক্ত স্থানই হলো মাতাফ বা তওয়াফের জন্য খোলা স্থান। যেখানে প্রতিদিন তওয়াফকারীদের জন্য রহমত নাজিল হতে থাকে। এখানে দোয়া কবুল হয়।
১৩) মাকামে ইব্রাহিম: কাবা শরিফের পূর্ব দিকে মাতাফ বা তাওয়াফ ভূমিসংলগ্ন মাকামে ইবরাহিমে যে পাথরখন্ড কারুকার্যখচিত বেরিকেডে সংরক্ষিত জান্নাতি ইয়াকুত পাথরসমূহের মধ্যে একটি ইয়াকুত পাথর হচ্ছে মাকাকে ইব্রাহিম। তার ওপর দাঁড়িয়ে হজরত ইবরাহিম (আ.) কাবা ঘর নির্মাণ করেছিলেন। এই পবিত্র স্থানের পেছনে দাঁড়িয়ে প্রতি প্রকার তাওয়াফের পর দুই রাকাত ‘ওয়াজিবুত তাওয়াফ’ নামাজ আদায় করতে হয়। এখানে দোয়া কবুল হয়। এ মাকামে ইবরাহিমকে নামাজের স্থান হিসেবে গ্রহণ করার দিকনির্দেশনা এসেছে কোরআনে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَ اتَّخِذُوۡا مِنۡ مَّقَامِ اِبۡرٰهٖمَ مُصَلًّی
‘তোমরা মাকামে ইবরাহিমকে নামাজের স্থানরূপে গ্রহণ করো।’ (সুরা বাকারা: আয়াত ১২৫)
১৪) জমজম: পবিত্র কাবাঘরের পূর্ব দিকে মসজিদুল হারাম শরিফ চত্বরেই জমজম কূপ অবস্থিত। এটি জগতের সবচেয়ে সুপেয় পানির উৎস। যদিও এখন কূপের কাছে যাওয়া যায় না। জমজম কূপটি মাতাফের বেইজমেন্টের নিচে অবস্থিত। এটাও দোয়া কবুলের অন্যতম একটি স্থান।
১৫) জমজমের পানি পান: পবিত্র জমজমের পানি পানের সময়ও দোয়া কবুল হয় তাই আমরা বিভিন্ন রোগ-সুখ ও গুনাহ থেকে মুক্তির আসায় এই পানি পান করার সময় দোয়া করতে পারি। রাসূলুল্লাহ্ ﷺ এর কমন নির্দেশনা হচ্ছে পানি পান করার ক্ষেত্রে বসে পানি পান করা। তাই উত্তম হচ্ছে কেউ পানি পান করলে বসে পান করবেন, সেটি জমজমের পানি হলেও। জমজমের পানি দাঁড়িয়ে পান করতে হবে এটা সুন্নাত বা অধিকাংশ ‘উলামায়ে কিরামের বক্তব্যের মাধ্যমেও এটি সাব্যস্ত হয়নি।
১৬) মা উম্মে হানির ঘর/পিংক কালার পিলার: মসজিদে আল হারামের সবগুলো পিলার এক রকম হলেও এই পিলারটির কালার হচ্ছে ভিন্ন পিংক কালার। এই পিলারটির স্থান হল উম্মে হানির ঘর। মিরাজের রাত্রিতে রাসুল সাঃ এই স্থানে ঘুমিয়ে ছিলেন। এখান থেকে রাসুল সাঃ কে জিবরাইল আঃ মিরাজের উদ্দেশ্যে নিয়ে গিয়েছিলেন। এটাও দোয়া কবুলের জায়গা।
১৭) সাফা: কাবা শরিফের পূর্ব পাশের নিকটতম পাহাড়। সাফা পাহাড়ে উঠে কাবাঘরের দিকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ত করে সায়ি শুরু করতে হয়। এটাও দোয়া কবুলের জায়গা।
১৮) মারওয়া: সাফা থেকে থেকে ৪৫০ মিটার দূরত্বে মারওয়া পাহাড় অবস্থিত। এটাও দোয়া কবুলের জায়গা। সায়ির সময় প্রতিবার মারওয়া পর্বতে দোয়া করতে হয়। এখানে সাঈ শেষ হয়।
১৯) মাসআ: সাফা ও মারওয়া এই দুই পাহাড়ের
মধ্যস্থলে বিবি হাজেরা (আ.) তাঁর শিশুপুত্র ইসমাইল (আ.)-এর পানীয়ের সন্ধানে ছোটাছুটি করেছিলেন। সেই স্মৃতি রক্ষার্থে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর অনুকরণে হাজিদের এই দুই পাহাড়ের মধ্যে সাতবার যাওয়া-আসা করতে হয়, একে সায়ি বলা হয়। এটিও দোয়া কবুলের জায়গা।
২০) মিলাইনে আখদারাইন: সাফা পাহাড় থেকে মারওয়া পাহাড়ের দিকে ৫০ গজ গেলে উপরে সবুজ বর্ণের লাইট দ্বারা চিহ্নিত প্রায় ৪০ হাত এই স্থানে আসলে সকল পুরুষদেরকে দৌড়াতে হয় আর মহিলারা ধীরে ধীরে হেটে যেতে হয়। এই স্থানেও দোয়া কবুল হয়।
২১) এছাড়াও রয়েছে কাবার অভ্যন্তরে দোয়া কবুল হয় তবে কাবা ঘরের ভেতরে প্রবেশ সবার জন্য উন্মুক্ত নয়। বিশেষ ব্যক্তিদের জন্য পবিত্র কাবা ঘরের দরজা খোলা হয়। কাবা ঘরের ভেতরের দোয়া করলে আল্লাহ তাআলা সব সময় তা কবুল করে নেন।
পবিত্র মক্কায় কাবা শরীফের পাশাপাশি এইসব জায়গায় দোয়া কবুল হয়ে থাকে। তাই হজ ও ওমরা পালনকারীদের জন্য এ স্থানগুলোতে গিয়ে খুব আদব, ভক্তি ও বিনয়ের সাথে একান্ত মনে বারবার দোয়া করা উচিত। এ স্থানগুলো দোয়া মহান আল্লাহ তাআলা সব সময় কবুল করে নেন।
আল কোরআনের সূচনাতেই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে দোয়া শিখিয়ে দিয়েছে: ‘ইয়্যা কানাবুদু ওয়া ইয়্যা কানাছ তাঈন।’ ‘আমরা কেবল তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই সাহায্য চাই। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট কিছু চায় না, আল্লাহ তাআলা তার প্রতি অসন্তুষ্ট হন।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে এ স্থানে দোয়া করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
#makkah #mosjid_al_Haram
কোন মন্তব্য নেই