Ads 1 Heydar Benar Ads 728×90

শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ: কোথা থেকে আসে এসব পাথর, আর শেষে কোথায় যায়?

শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ: কোথা থেকে আসে এসব পাথর, আর শেষে কোথায় যায়? 


প্রতিবেদন: Ami Probashi Bangalee YIR

হজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ (রমি জামারাত)। প্রতি বছর মিনার জামারাত ব্রিজে হাজীরা শয়তানের প্রতীকী তিনটি স্তম্ভে পাথর ছোঁড়েন। এই আমলটির সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে ইসলামের ঐতিহাসিক এক ঘটনার স্মৃতি।

ইতিহাসে ফিরে দেখা: হযরত ইব্রাহিম (আঃ) ও শয়তানকে প্রত্যাখ্যান

এই রসমের উৎপত্তি হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর যুগে। যখন তিনি আল্লাহর আদেশে তাঁর পুত্র হযরত ইসমাইল (আঃ)-কে কোরবানি দিতে যাচ্ছিলেন, তখন পথিমধ্যে শয়তান তাঁকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছিল। ইব্রাহিম (আঃ) তখন তিনটি স্থানে শয়তানকে পাথর ছুঁড়ে তাড়িয়ে দেন। সেই ঘটনার অনুসরণে মুসলিম উম্মাহ আজও হজের একটি অংশ হিসেবে এই আমল পালন করেন।

পাথর সংগ্রহ: কোথা থেকে আসে নিক্ষেপের পাথর?

হজযাত্রীরা আরাফাতের ময়দানে দিনভর ইবাদত ও কান্নাকাটি শেষে মুজদালিফায় রাত যাপন করেন
সেখানেই রয়েছে ছোট আকারের পাথর সংগ্রহের নিয়ম। প্রতিটি হাজী সেখান থেকে ২১টি ছোট নুড়ি পাথর সংগ্রহ করেন, যেগুলো দিয়ে শয়তানকে লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়া হয়।

👉 চলতি বছর মিনায় ৮৩,৪১১ বস্তা নুড়ি পাথর বিতরণ করা হয়েছে হাজীদের মধ্যে।
👉 ৩০০টির বেশি নির্ধারিত স্থানে এই ব্যাগ বিতরণ করা হয়, যেন সবাই সহজে সংগ্রহ করতে পারেন।

পাথর নিক্ষেপ: তিন স্তম্ভে তিন দিন

জামারায় তিনটি স্তম্ভ—ছোট, মাঝারি ও বড় শয়তান নামে পরিচিত।
নিম্নরূপভাবে হাজীরা পাথর নিক্ষেপ করেন:

প্রথম দিন (১০ জিলহজ): শুধু বড় শয়তানকে ৭টি পাথর
পরবর্তী দুই দিন (১১ ও ১২ জিলহজ):
– ছোট শয়তান – ৭টি
– মাঝারি শয়তান – ৭টি
– বড় শয়তান – ৭টি
মোট: ২১টি পাথর

এই স্তম্ভগুলোতে একসঙ্গে লাখো হাজী পাথর ছোঁড়েন। ফলে প্রশ্ন জাগে—প্রতি বছর কোটি কোটি পাথর কোথা থেকে আসে? এরপর তাদের কী হয়?

পাথর ব্যবস্থাপনার চমকপ্রদ আধুনিক প্রযুক্তি

জামারাত ব্রিজটি একটি চারতলা বিশিষ্ট আধুনিক স্থাপনা, যেখানে পাথর নিক্ষেপের পরপরই স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রপাতির মাধ্যমে নিচে পড়ে যায়।

🔻 স্তম্ভে পড়ার পর পাথরগুলো নিচের ফ্লোরে চলে যায়
🔻 সেখান থেকে কনভেয়ার বেল্টে করে নিয়ে যাওয়া হয় বেজমেন্টে
🔻 নিচে রয়েছে ৫তলা বিশিষ্ট একটি বেজমেন্ট ফ্লোর, যেখানে:

সেন্সর প্রযুক্তি ব্যবহার করে পাথরগুলো বাছাই করা হয়

পাথরগুলো ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করা হয়

শুকিয়ে নেওয়া হয়

পরবর্তী বছরের জন্য সংরক্ষণ ও পুনঃব্যবহারযোগ্যভাবে প্যাকেটজাত করা হয়


এই পুরো প্রক্রিয়াটি সুষ্ঠু, পরিষ্কার ও পরিবেশবান্ধবভাবে সম্পন্ন হয়।

এক নজরে কিছু চমকপ্রদ তথ্য:

📌 প্রতি বছর আনুমানিক ১,০০০ টন নুড়ি পাথর এখানে ব্যবহৃত হয়
📌 ব্যবহারের পর পাথরগুলো ফেলে দেওয়া হয় না—সংরক্ষণ ও রিসাইক্লিং করা হয়
📌 মিনা ও মুজদালিফায় রয়েছে ৩০০টিরও বেশি পাথর বিতরণ পয়েন্ট
📌 ব্যবস্থাপনায় অংশ নেন হাজারো স্বেচ্ছাসেবক ও হজ ব্যবস্থাপনা কর্মী

পরিচ্ছন্নতা ও প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনার এক অনন্য দৃষ্টান্ত

ইসলামের পবিত্র আমল হিসেবে পাথর নিক্ষেপ যেমন আত্মিক শুদ্ধির অংশ, তেমনি সৌদি হজ কর্তৃপক্ষের প্রযুক্তিনির্ভর ও পরিচ্ছন্ন ব্যবস্থাপনা এটি আরও সহজ ও সুশৃঙ্খল করে তুলেছে।

একদিকে রয়েছে ধর্মীয় অনুভূতির গভীরতা, অন্যদিকে রয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির সফল প্রয়োগ—এই দুটি মিলেই হজের জামারায় শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ এখন একটি সুবিন্যস্ত ও বিস্ময়কর আয়োজন।

📢 দোয়া করি, আল্লাহ সবার হজ কবুল করুন এবং হজে অংশগ্রহণ করার তৌফিক দিন।
ঈদ মোবারক ও হজ মোবারক।


কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.