রাজনীতি, ডক্টর ইউনুস এর পদত্যাগ, অভ্যুত্থান ও আত্মসমালোচনার ৯ মাস
রাজনীতি, ডক্টর ইউনুস এর পদত্যাগ, অভ্যুত্থান ও আত্মসমালোচনার ৯ মাস
দেশের রাজনীতি ফের এক অনিশ্চিত মোড়ে। সরকারের উচ্চপর্যায়ে দায়িত্ব পালনে থাকা ড. ইউনূস এখন পর্যন্ত চূড়ান্তভাবে পদত্যাগে রাজি হননি। তবে নীতিনির্ধারণী সূত্র বলছে, তাঁর পদত্যাগপত্রের খসড়া ইতোমধ্যেই প্রস্তুত। আশঙ্কা করা হচ্ছে, তাঁর পদত্যাগের পর উপদেষ্টা পরিষদের বড় অংশও দায়িত্ব ছেড়ে দিতে পারে। রাজনৈতিক অঙ্গনে এই গুঞ্জনই এখন প্রধান আলোচনার বিষয়।
নতুন প্রধান উপদেষ্টা কে? নির্বাচনের তাড়না কেন?
সূত্রমতে, ড. ইউনূস পদত্যাগ করলে বিশিষ্ট আইনবিদ ও বিশ্লেষক ড. আসিফ নজরুলকে প্রধান উপদেষ্টা করে একটি অন্তর্বর্তী নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে সেই নির্বাচন হবে কতটা গ্রহণযোগ্য কিংবা সত্যিকারের সংস্কারমুখী—সেটি নিয়ে উঠেছে বড় প্রশ্ন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, চলমান রাজনৈতিক প্রক্রিয়া কোন সংস্কারের দিকে এগোচ্ছে না বরং একটি ব্যর্থ গণ-আন্দোলনের পুনরাবৃত্তির পথে হাঁটছে। ১৯৯০-এর মতোই ২০২৪ সালটি হয়তো ইতিহাসে আরেকটি অসম্পূর্ণ অভ্যুত্থান হিসেবেই চিহ্নিত হতে চলেছে।
ভারতীয় কূটনৈতিক চাপ ও আঞ্চলিক কৌশল
কূটনৈতিক অঙ্গনের সূত্রে জানা গেছে, ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কার—যেকোনো মূল্যে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনের মাধ্যমে প্রধান বিরোধী দলে পরিণত করতে হবে। এটি বাস্তবায়নে কিছু রাজনৈতিক দল এরই মধ্যে সম্মত হয়েছে বলেও গুঞ্জন রয়েছে। এমনকি ইউনূস সরকারের পদত্যাগের পর সম্ভাব্য নতুন নেতৃত্ব কারা হবেন, সেটাও নির্ধারিত বলে অনেকে মনে করছেন।
একজন প্রধানমন্ত্রীর বাস্তবতা: ক্ষমতা না থাকলে দায়িত্বে থাকার মানে কী?
ড. ইউনূসের সমর্থকদের ভাষ্যে উঠে এসেছে তীব্র হতাশা। তাঁরা বলছেন, “আপনি একজন দেশের প্রধান, অথচ মাঠ পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ অন্যদের হাতে। পুলিশ দলীয় নেতাদের সুপারিশ ছাড়া মামলা নিচ্ছে না, চাঁদাবাজদের গ্রেফতার করতে পারছে না।
সচিবালয় থেকে উপজেলা প্রশাসন—সবখানে একটি রাজনৈতিক দলের প্রভাব। ফলাফল, ইউনূস সরকার কার্যত অকার্যকর। এমন অবস্থায় দায়িত্বে থেকে কী লাভ?
রাজনীতি বনাম ব্যক্তিগত লালসা
গত তিন দিন ধরে এক প্রভাবশালী নেতা ইউনূসের কার্যালয় অবরোধ করে রেখেছেন, শুধু নিজের মেয়র হওয়ার শখ পূরণ করতে। এতে প্রধানমন্ত্রীর একাধিক বৈঠক বাতিল করতে হয়েছে। এমন দৃষ্টান্ত নজিরবিহীন নয়, তবে প্রতিনিয়ত এমন ঘটনা হলে রাষ্ট্রযন্ত্র চলবে কীভাবে?
ঐক্যের অভাব, আত্মঘাতী বিভাজন
গত ৯ মাসে নানা রাজনৈতিক শক্তির ভেতরে বিরোধ, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, এবং 'ক্রেডিট' নেওয়ার প্রতিযোগিতা চলেছে। এক পক্ষের ‘তোরা বাংলা ছাড়’ হুঙ্কার আরেক পক্ষের 'পাকিস্তান টানার' কৌশল সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে। ফলে সেই ঐক্য গড়ে ওঠেনি, যা ২০০৭ সালের সংকটেও গড়ে উঠেছিল।
এই বিভাজনের সুযোগে ঢুকে পড়েছে ভারত এবং আওয়ামী লীগ—এটা জানা সত্ত্বেও প্রস্তুতি ছিল না বলে অভিযোগ বিশ্লেষকদের।
শহীদদের জন্যে ন্যায়বিচার, না কি শুধু রাজনীতির হাতিয়ার?
গত ৯ মাসে সংঘর্ষে আহত ও শহীদ পরিবারগুলোর প্রতি সেভাবে নজর দেওয়া হয়নি। অনেক পরিবার এখনো সাহায্য পায়নি, বিচার পায়নি। অথচ এই পরিবারগুলোর ত্যাগের ওপর ভর করেই রাজনীতি হয়েছে, মঞ্চ হয়েছে, মিছিল হয়েছে।
এই অবহেলা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে—জুলাই ছিলো কি আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত, না কি সেটির অবমাননাই আজকের এই অভিশাপের রূপ নিচ্ছে?
শেষ প্রশ্ন: মানুষ দূরে সরে গেল কেন?
জুলাই মাসে যে সাধারণ মানুষ রাজপথে নেমেছিল, তাদের আর দেখা যাচ্ছে না কেন? প্রশ্নটা রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য জরুরি হলেও, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে ইউনূস সরকারের ভেতরেও। কেন মানুষের আস্থা হারানো গেল, কেন তারা ফিরে গেল—সেই উত্তরেই লুকিয়ে আছে আজকের পরিণতির মূল কারণ।
এই প্রতিবেদনটি সমসাময়িক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, গোপন সূত্র ও সাধারণ বিশ্লেষণমূলক মূল্যায়নের ভিত্তিতে প্রস্তুত করা হয়েছে। কারও ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করাই এই প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য নয়।
মোহাম্মদ ইউনুচ
সৌদি আরব থেকে।
কোন মন্তব্য নেই